শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
টানা ১ বছর পর বরিশাল ঢাকা রুটে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু হয়েছে। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯ টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আধুনিক ও নতুন বিমান শ্বেত বলাকা যাত্রী নিয়ে বরিশাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এরপর সেখানে আয়োজিত বরিশাল-ঢাকা রুটে বিমানের ফ্লাইটের এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাংসদ জহিদ ফারুক শামীম-এমপি।
ফিতা কেটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জহিদ ফারুক শামীম-এমপি তার বক্তব্যে বলেন।
প্রধান অতিথি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। এ দুটির মহালগ্নে আজ বরিশাল-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু হওয়ায় আমরা সকলেই গর্বিত ও আনন্দিত। প্রথমেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ আজ বাংলাদেশ সল্পোউন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পৌছেছে এবং তার নেতৃত্বেই আমরা ২০৩১ সালে বাংলাদেশে উচ্চ মধ্যম আয়ে এবং ২০৪১ সালে সমৃদ্ধশালী দেশের লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকের বাংলাদেশকে যে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তার জন্যই বাংলাদেশ বিমানের বহরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হয়েছে। একটা সময় দেখেছি বিমান চলাচল করতো কিন্তু যাত্রী ছিলো না। কারণ তখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতিটা তেমন ছিলো না বিধায় লোকজন টিকিট কেটে বিমানে চড়তো না। কিন্তু এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। ফলে বেসরকারি বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট চালু থাকার পরও বরিশাল-ঢাকা রুটে টিকিট পাওয়া যায়না। ৩২ শত টাকার টিকিট ৭-৮ হাজার টাকাতেও ক্রয় করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বরিশাল তথা দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ আমরা। অন্যান্য সরকারের সময় এ অঞ্চল অবহেলিত থাকে। শুধুমাত্র মানণীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকারে আসে তখন এ অঞ্চলের উন্নয়ন হয়। আজ দক্ষিনাঞ্চলে পায়রা বন্দর হচ্ছে, পদ্মা সেতু শেষের পথে। পদ্মা সেতু থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ফোরলেনের রাস্তা হবে, রেললাইন হবে। এগুলো হলে শিল্প-কারখানা স্থাপন বাড়তে থাকবে, মানুষের চাকুরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে, অর্থনৈতিকভাবে তারা আরও স্বাবলম্বী হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছরের মার্চের ২১ তারিখে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বরিশাল বিভাগের সকল জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যাতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালু হয় সেজন্য চেষ্টা করেছেন। ধন্যবাদ জানাই বিমানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীকে। বিমান চালু করার জন্য তাকে শান্তিতে বসতে দেইনি। তিনি বিমান চলাচল শুরুর যেমন আশ্বাস দিয়েছিলেন, তেমনি বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ে বড় ও আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি টার্মিনাল ভবনও বড় করার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পেছনে বরিশাল থেকে যাত্রী কম হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বরিশাল থেকে ঢাকায় বিমানের যাওয়ার যাত্রীর অভাব নেই। কারন এখানে পায়রা বন্দর হয়েছে, তাপপবিদ্যুৎকেন্দ্র, সেনানিবাসহয়েছে, বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হচ্ছে যাতে বিদেশীরা যাওয়া আসা করছেন। আমার অনুরোধ যেন সময়টা মেইনটেন করা হয়। আবার আমরা এমন অভিযোগ শুনতে পাই, যে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলে বলা হয় বিমানের টিকিট নাই। কিন্তু বিমানে উঠে দেখা যায় অর্ধেক খালি। ২-১ টি সিট খালি থাকতে পারে, কারণ অনেকেই শেষ মুহুর্তে সিট ক্যানসেল করতে পারেন। এরথেকে বেশি হলে সন্দেহের চোখে আমরা দেখি। বেসরকারি বিমান কিন্তু ফুল লোডে বরিশাল থেকে ঢাকায় যায় এবং ঢাকা থেকে বরিশালে আসে। তাহলে বিমান কেন পারবে না।
তিনি বরিশালবাশীর উদ্দেশ্যে বলেন, এটি সম্পূর্ণ নতুন বিমান। যা খুবই সুন্দর ও আরামদায়ক। আমার অনুরোধ থাকবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহি বাংলাদেশ বিমানে যাত্রা করুন। সেখানে টিকিট না পেলে বেসরকারি সংস্থায় খুজতে যান। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা হিসেবে এটাকে বাচিয়ে রাখা দায়িত্ব আমাদের। এমডি সাহেব বলেছেন,এখন থেকে প্রতিদিন সকালে একটি করে ফ্লাইট যাওয়া আসা করবে, যদি ফুল লোড থাকে তাহলে বিকেলেও একটি করে ফ্লাইট দেয়া হবে। ফলে এটার দ্বায়-দায়িত্ব আমাদের। যদি আমরা লক্ষ অর্জন করতে পারি তাহলে তারা ফ্লাইটের মাত্রা বাড়িয়ে দিবেন। যাত্রী না দিতে পারলে বিমান বন্ধ হয়ে যাবে। দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের প্রতি অনুরোধ বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে যাত্রা করুন।
অনুষ্ঠানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ বিভাগীয়, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আজ ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এরআগে ৭ মার্চের সেই অমিয় বানী বর্জ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিলো যারকন্ঠে “রক্ত যখন দিয়েছি,রক্ত আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশআল্লাহ”। এই যে ইনশআল্লাহ শব্দটা বঙ্গবন্ধু অন্তরের অন্তস্থল থেকে কিভাবে উচ্চারণ করেছিল, ধ্বনিত হয়েছিলো আজ যদি আপনারা দেখেন, তাহলে বুঝবেন বঙ্গবন্ধু কতোটা ধার্মিক ও ধর্মপরায়ন ছিলেন। সেই দিনের ভাষন জাতিসংঘে হয়তো অনেক পরে গৃহিত হয়েছে কিন্তু সাড়ে ৭ কোটি মানুষের নেতা হিসেবে ওই ভাষনটি দোআ হিসেবে আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে গেছে। তিনি দেশকে মুক্ত করে ছেরেছেন, আমরা মুক্ত হয়েছি। মুক্ত স্বাধীন দেশে, মুক্ত বিহঙ্গের মতো বলাকার চিহ্ণ নিয়ে আজ আমরা বিমান নিয়ে এই বরিশালে অবতরণ করতে পেরেছি।
তিনি বলেণ, আজ যে বিমান নিয়ে আসলাম তার নাম হচ্ছে শ্বেত বলাকা। এই নামটি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত। শুধু এটিই নয় বাংলাদেশ বিমানের নতুন নতুন সংযুক্ত সব বিমানের সুন্দর সুন্দর নাম তার দেয়া।
ড্যাশ-৮ মডেলের এই বিমানের জানালার পরিসর বড়, পায়ের স্পেশ আরামদায়ক। সকল বিমানে এয়ার পিউরিফায়ার আছে কিন্তু এই বিশেষ বিমানটিতে হেপা ফিলট্রেশন পদ্বতি রয়েছে। জীবানু নিয়ে যে ল্যাবরটিতে কাজ করা হয় সেখানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আর এই পদ্বতি ৪ মিনিটিরে মাথায় বিমানের বাতাস জীবানুমুক্ত করতে সক্ষম।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মরণ করেন তিনি। একইসাথে জাতীয় চারনেতা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তিনি।
সে-সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃজসিম উদ্দিন, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশন এনামুল হক , সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আলমগীর খান আলো, বিমানের বরিশালের মেনেজার প্রশান্ত কুমার, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুন, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মধু, জেলা ছাত্রলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি জোবায়ের আব্দুল্লাহ জিন্নাহ, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মাহাদ সহ উর্ধ্বতন কর্মকতা।